‘হৃদয়ের কথা’ ছবির একটি গানে প্রথমবার আমা’র স’ঙ্গে তিনা পারফর্ম করেছিল। নাচের একটা দৃ’শ্য ছিল এমন, তিনা ঘুরে বসেছে এবং তার হাতটা আমা’র দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে; আমি তাকে হাত ধ’রে টেনে তুলি।
টেনে তোলার সময় আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। বলে রাখা ভালো, ওটা ছিল লাইভ পারফর্মেন্স। অনেক শ্রোতা দেখছিলেন। তখন তিনার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। ওই সময়ে তিনাকে দেখে কেন জানি আমা’র মনের ভায়োলিন বেজে উঠেছিল।
এরপর আম’রা পারফর্মেন্সটা শেষ করি। পরে বাসায় ফি’রে মনে মনে তিনাকে খুঁজছিলাম। যারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, তাদের আমি বলি- কী ব্যাপার? যে মেয়েটা আমা’র সাথে নাচল, সে তো পরে আমাকে আর কিছুই বলল না।
পরে তিনা আমাকে ফোন করে বলেছিল, ভাইয়া কেমন হয়েছে আমাদের পারফর্মেন্স? আমি তখন বলি, খুব ভালো হয়েছে। আমি তখন ইচ্ছে করে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেই। এরপর একটা কাজে’র জন্য তিনা আমাকে ফোন করে একদিন। আমি তাকে বলি, কাজটা করো না। না করাই তোমা’র জন্য ভালো হবে। এভাবে দু-দিন, একদিন ক’রতে ক’রতে তিনার স’ঙ্গে আমা’র পরিচয় মজবুত হতে থাকে।
তিনার স’ঙ্গে প্রচুর ফোনে কথা বলতাম। সারাদিন শু’টিং শেষে রাতে বাসায় ফি’রে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে ফোনে কথা বলতাম তিনার স’ঙ্গে। ওর নিজস্ব ফোন ছিলনা তখন। ওদের বাসার ল্যান্ডফোনে কথা হতো। রাত ১২ টায় ফোনে কথা বলা শুরু করতাম কখন যে রাত গড়িয়ে আযান দিত, টেরই পেতাম না।
সারাদিন শু’টিংয়ের পর তিনার স’ঙ্গে কথা বলার সময় এত এনার্জি কোথা থেকে আসত আমি নিজেই বুঝতাম না। আযান যখন দিত, তখন ফোন রেখে দিতে চাইতাম। তখন একটা মজার ঘ’টনা ঘটত।
কে ফোন আগে রেখে দেবে এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে ত’র্কাত’র্কি লাগতো। আমি নাকি তিনা, কে ফোন রাখবে এটা ঠিক ক’রতেই আরো এক ঘণ্টা চলে যেত। মাঝে মধ্যে আমি আগে ফোন করতাম।
তিনার মা ফোন ধ’রতো। আমি বলতাম, আন্টি তিনার স’ঙ্গে কাজে’র ব্যাপারে কথা ছিল। তখন ওর মা তাকে ডেকে দিত। তখনও আম’রা কেউ কাউকে ‘লাভ ইউ’ কথাটা কিন্তু বলিনি।
একবার একটি শোতে অংশ নিতে তিনা চীনে যাচ্ছিল। বেশ লম্বা ট্যুর ছিল, ২০-২২ দিনের ট্যুর। এই ট্যুরে যেতে আমি তাকে সায় দিলাম বটে, কিন্তু ওই সময়টায় আবার আমি ভাবলাম, তিনা চীনে যাচ্ছে; ওর সাথে কথা হবে না ২০ দিন! এটা ভাবতেই আমি ওকে কেন জানি ‘মিস’ ক’রতে শুরু করলাম।
সত্যি কথা বলতে যেটা এর আগে কাউকে করিনি। ওই সময় আমি তার স’ঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনা তখন জা’নায়, সে এয়ারপোর্টে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চীনে উড়াল দেবে। ওই সময়টা আমি তাকে বলে ফেলি, তিনা আমি তোমাকে খুব মিস করছি। আমি মনে হয় তোমাকে ভালোবেসে ফে’লেছি, অ্যান্ড আই লাভ ইউ।
পরে তিনার কাছ থেকে শুনেছি, এটা শুনে নাকি সে এয়ারপোর্টে হা করে দাঁড়িয়েছিল। একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিল! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি তাকে ভালোবাসি এটা বলার পরে সে হ্যাঁ, না কিছুই বলেনি।
চীন থেকে ফি’রে সে আমাকে হ্যাঁ বলেছিল। এরমধ্যে ২০ দিন তিনার স’ঙ্গে কথা হয়নি। আমি তখন খুব চিন্তায় থাকতাম। তিনা ওখানে ভাল আছে কিনা, কিভাবে ঘুরছে, কি খাচ্ছে।
এসব কথা সবসময় মনে পড়তো। এরপর তিনা ঢাকায় ফি’রে এয়ারপোর্টে নেমে ওর বাবাকে ফোন করার আগেই আমাকে ফোন করেছিল। ওই সময়টা তিনার খুব ঠাণ্ডা, জ্বর ছিল।
দেশে ফিরার পরে তিনার স’ঙ্গে ওইদিন বিকেলে দেখা করি। ওইদিন আমা’র শু’টিং ছিল। শ’রীর খা’রাপের ছুতো দেখিয়ে শু’টিং ক্যানসেল করি(হাহাহা…)। তিনা আমা’র জন্য চীন থেকে একটা গোল্ডেন ব্যাংক নিয়ে এসেছে।
ওটাই ছিল তিনার থেকে পাওয়া আমা’র প্রথম উপহার। আমা’র হাতে উপহারটি দিয়ে তিনা বলেছিল, এটা আমা’র ব্যাংক রাজকুমা’রের জন্য উপহার। সেদিন তিশা লাভ ইউ ঠু বলেছিল। এরপর অনেক কিছু ম্যানেজ করে তিনার স’ঙ্গে দেখা করতাম। তিনাকে দেখার জন্য ধানমন্ডিতে অফিস নেই।
ওর বাসার বিপরীত পাশে অফিস নেয়া হয়েছিল। জা’নালা দিয়ে তিনার বাসা দেখা যেত না বলে আমি বাথরুমে উঁকি দিয়ে ওকে দেখতাম। ফোন করে বলতাম তুমি বারান্দায় আসো। এছাড়া বাইরে দেখা করা খুব টাফ ছিল।
কারণ মানুষ দেখলে ভিড় করত। সিনেমা’র গল্পেও এমনটা কম দেখা যায়। এরপর তিনার বাসায় বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠাই। প্রথমেই তারা নাখোশ। কোনোভাবেই আমা’র স’ঙ্গে তিনাকে বিয়ে দেবেনা।
এই শর্ত ওই শর্ত জুড়ে দিচ্ছিল। তখন মনে হয়েছিল গু’লি মা’রি প্রেমের, হাহাহা…। এরপর পরিবার অমত বলেই ছয় মাস আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ছয় মাস পরে তিনা একদিন ফোন করে আমা’র সাথে দেখা ক’রতে চাইল। আমি ঢাকায় ছিলাম না। উড়ে চলে আসি। তারপর আবার আমাদের প্রেম জোড়া লাগে। প্রায় দেড় বছর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০৭ সালে ১৮ ডিসেম্বর আম’রা বিয়ে করি।
বিয়ের পর তিনার প্রতি আমা’র ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে। এটা কেন হয়েছে আমা’র জা’না নেই। আম’রা দুজনেই যখন একস’ঙ্গে থাকি, আম’রা দুজনেই সময়টাকে এনজয় করি।
মাঝেমধ্যে ঝগড়া লাগলে আম’রা ভাববাচ্যে কথা বলি। যেমন, কারো কিছু লাগলে বলুক, বাসায় ফেরার সময় নিয়ে আসবো। কিংবা তিনা আমাকে বলেন, কারো খিদে লাগলে খেয়ে নিক! আমাদের খুব সিলি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি স্থা’য়ী হয়না। যার দোষ বেশি থাকে, সে আগে এসে সরি বলে। তখন আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।